উনত্রিশ ফেব্রুয়ারি -- ৩

 সাজু বললো ,

- এখনো তো আপনার বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো এ্যাকশনে যায়নি। তাহলে কীভাবে জানলেন যে সাইমুন আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
- সাইমুন আমাকে কল করেছিল। খুব উত্তেজিত হয়ে কথা বলছিল। বারবার হুমকি দিচ্ছে আমাকে সে ফাঁসিতে ঝুলাবে।
বেশ বিরক্ত আর উদাস হয়ে কথাগুলো বললো তৃপ্তি।
- এই বাসা থেকে থানায় কল গিয়েছিল রাত পৌনে এগারোটার দিকে। সাইমুনের কথা অনুযায়ী আপনি তার কিছুক্ষণ আগে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়েছেন। সাইমুন সাহেব নেই তবুও এতো রাতে কেন তার বাসায় এসেছিলেন?
চাদরটা খানিক টেনে দিয়ে প্রশ্ন করলো সাজু ভাই।
- আসলে সাইমুনের কাছেই গতকাল শুনেছিলাম তার স্ত্রী অসুস্থ। ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। খুব বেশিদিন বাঁচবে না। তাই ভাবলাম আমাদের অফিসের জন্য যেহেতু সে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে সেহেতু আমি একটু দেখে যাই।
- ভাবির ব্রেইন ক্যান্সার ছিল?
অবাক হয়ে জানতে চাইলো রাবেয়া।
তারা সবাই ছাদেই দাঁড়িয়ে আছে। নুড়ির ব্রেইন ক্যান্সার শুনে সকলের মধ্যে যেন একটা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সাজু বললো ,
- আপনার সঙ্গে কি কি কথা হয়েছিল তাদের? সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই বলেন।
- আমি অফিস থেকে সরাসরি এখানেই আসি৷ দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলাতে সে বলে রাত দশটার পরে বাহিরের কারো ভেতরে আসার অনুমতি নেই। কারো গেস্ট এলে ভাড়াটিয়া নিজে নেমে আসতে হবে। তারপর আমার ড্রাইভার ওনাকে ৫০০ টাকা দিলে তখন দারোয়ান রাজি হয়ে গেইট খুলে দেয়।
- একপ্রকার ঘুষ দিয়ে আপনি বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলেন। কি অদ্ভুত মানুষ আপনি।
বিরক্ত হয়ে কথাটা বললো আসলাম ফরাজির বড় মেয়ে রাবেয়া।
কিন্তু তৃপ্তি সেই কথার জবাবে বললো ,
- আমি তাকে বলেছিলাম যে সাইমুন সাহেবের স্ত্রী অসুস্থ তাই আসতে পারবে না। দরকার হলে সে যেন বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে। তাছাড়া সে যদি ঢুকতে না দিত তাহলে তো আমি কিছুতেই প্রবেশ করতে পারতাম না।
- ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া দুটোই সমান অপরাধ।
খানিকটা জোর দিয়ে বলেন লিয়াকত আলী।
সাজু বললো ,
- তারপর বাসায় ঢুকে কি করলেন?
সবাইকে পরোয়া করে তৃপ্তি বললো ,
- দরজা খুলেছিল সাইমুনের শালি। তাকে জিজ্ঞেস করলাম সাইমুনের স্ত্রী কোথায়। সে জানায় তার নাম নিহা, নুড়ি তার বড়বোন। তারপর আমাকে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে যায়।
- রুমটা নিশ্চয়ই সাইমুনের স্ত্রীর তাই না?
- হ্যাঁ, আপুটা তখন বিছানায় শুয়ে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন রাত আটটার পর থেকে তার প্রচুর মাথা ব্যথা হচ্ছে। আমি তার সাথে পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে বিদায় নেই।
- এতো জল্পনাকল্পনা করে বাড়ির ভেতর ঢুকে মাত্র পাঁচ মিনিটে কথা শেষ করে বের হয়ে গেলেন?
পাশে বসে প্রশ্ন করলো লিয়াকত আলী।
- আমি আগেই বলেছি সাইমুনের স্ত্রীর প্রচন্ড মাথা ব্যথা হচ্ছিল। যার ব্রেইন ক্যান্সার তাকে মাথা ব্যথার সময় কেন কষ্ট দেবো? তাছাড়া রাত অনেক বেজে গেছিল। সেজন্য বিলম্ব না করে আমি বিদায় নিয়ে বের হয়ে যাই৷
- তখনও কোনো সমস্যা ছিল না তাই না?
- আমার নজরে তো কিছু পড়েনি৷
- আপনি চলে যাবার কিছুক্ষণ পরই দারোয়ান উপরে আসে। আসার পরে তিনি ফ্ল্যাটের দরজা খোলা পেয়ে প্রবেশ করে। তারপর রুমের মধ্যে র'ক্তা'ক্ত দেহগুলো আবিষ্কার করে।
- বিষয়টা কীভাবে কি হলো আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না। তাছাড়া আমি যদি তাদের খুন করে চলে যাই। তাহলে ছাদে এসে দারোয়ানকে তো আর মারতে পারি না তাই না?
চিলেকোঠার স্বামী স্ত্রী দুজনেই সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সাজু তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। তারা খানিকটা নড়েচড়ে দাঁড়ায়। সাজু বললো ,
- দারোয়ানের লা'শটা কিন্তু ছাদেই পাওয়া গেছে। আপনারাও ছাদে ছিলেন। আমার কথা বুঝতে পেরেছেন?
তারা দুজনেই যেন আকাশ থেকে পড়লো। এভাবে তাদের দিকে সন্দেহের তীর যাবে হয়তা কল্পনাও করেনি। লোকটা বললো ,
- আমরা কীভাবে বুঝবো স্যার? আমরা তো দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছিলাম। আপনারা এসে যখন ডাকছেন তখন উঠলাম।
- তোমার বউ যখন দেখলো দারোয়ান ট্যাংকির ছাদে যাচ্ছে। তখনও কি তোমাদের মনে হয় নাই যে লোকটা কি করছে একটু দেখি৷
বিরক্ত আর রাগের মাধ্যমে প্রশ্ন করলো এসআই লিয়াকত আলী।
সাজু ভাই তখন বাড়িওয়ালা আসলাম ফরাজির দিকে তাকিয়ে বললো ,
- সন্দেহের দৃষ্টিকোণ থেকে পুলিশ এখন এদের দু'জনকে থানায় নিয়ে যাবে৷ কে আসল অপরাধী আর কারা এসবের সঙ্গে জড়িত , আশা করি সবকিছুই বের হয়ে যাবে।
চিলেকোঠার স্বামী স্ত্রী দুজনেই কান্না করে দিল। তারা অসহায় হয়ে আসলাম ফরাজির কাছে অনুনয় বিনয় করতে লাগলো। রাবেয়া বললো ,
- আপনাদের তো উচিত ছিল দারোয়ান চাচাকে সাহায্য করা। তা না করে হেলাফেলা করেছেন। এখানে বাবা কি করবে?
.
.
সবকিছু শেষ করে এসআই লিয়াকত ও সাজু ভাই সবাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে যখন বের হলো তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত তিনটার একটু বেশি।
চিলেকোঠার স্বামী স্ত্রী দু'জনকে থানায় নিয়ে গেল। বিদায় মুহূর্তে সাজু বললো ,
- সকালে আবার আসতে হবে। সাইমুন সাহেব চট্টগ্রাম থেকে ফিরলে তার সাথে কথা বলতে হবে। নুড়ি নিহার মা-বাবাও তো আসবেন।
- তাদের সবাইকে থানায় আসতে বলবো৷ তুই ঘুম থেকে উঠে আমাকে কল দিস। সরাসরি থানায় যদি আসিস তাহলে ভালো হবে।
- কখন ঘুম ভাঙ্গবে জানি না। এখন বাসায় গিয়ে আর ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফজরের নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাবো।
- তুই তো হাসান স্যারের বাসায় যাবি তাই না?
- হ্যাঁ সেখানেই যাবো। ভাবি অলরেডি অনেকবার কল করেছে। আবার মনে হচ্ছে দিল...
বলতে বলতে পকেট থেকে মোবাইল বের করলো সাজু ভাই।
----------
কফির কাপটা সাজুর হাতে দিয়ে ভাবি বললো ,
- তোমার ভাই ডিবি অফিসার হয়েও তোমার মতো এরকম ডিউটি করে না। বিকেলে বেড়াতে এসে তুমি রাতে গোয়েন্দাগিরি করতে চলে গেলে। এতো সখ কেন বলতে পারো?
ঠান্ডা কফিতে চুমুক দিয়ে সাজু কিছু বলবে আর তখনই তার নাম্বারে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। সাজু মোবাইল বের করে কলটা রিসিভ করলো। সে ভেবেছিল এসআই লিয়াকত হয়তো অন্য কোনো নাম্বার দিয়ে কল করেছে। নাহলে এত রাতে কল করার মতো কে আছে?
সাজু বললো ,
- হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আপনার নাম্বারে এখনই একটা এসএমএস যাবে। খুব মনোযোগ দিয়ে সেটা পড়বেন। আশা করি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন।
- আপনি কে বলছেন?
কণ্ঠটা একটা ছেলের। সাজুর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কলটা কেটে দিল। ভাবি বললো ,
- কি হয়েছে সাজু?
তখনই মোবাইলে মেসেজ এলো। সাজু মেসেজটি ওপেন করলো।
❝ নুড়ি নামের যে মেয়েটি আজকে খুন হয়েছে সে ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল না। কিছুদিন পরে মেয়েটা মারা যাবে এরকম কোনো প্রাকৃতিক সম্ভবনাও ছিল না। তাকে খুন করা হয়েছে অন্য কারণে। সেই কারণটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনার! ❞
মেসেজ পড়ে সাজু বিড়বিড় করে বললো ,
- ব্রেইন ক্যান্সারের কথাটা তাহলে কেন উঠলো? সাইমুন নিজেই কি বিষয়টার সঙ্গে জড়িত? যদি তাই হবে তাহলে সেটা কি?
.
.
.
চলবে.....

Comments

Popular posts from this blog

টু ফাইভ এইট জিরো -- ১

টু ফাইভ এইট জিরো -- ২

গুরুত্বপূর্ণ হোক সকল জেলা